যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকে এবং দেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিকানা থাকে রাষ্ট্রের হাতে। সেই হিসেবে সাধারণ ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ের চেয়ে এ ধরনের সংগঠনের কিছু বাড়তি বৈশিষ্ট্য থাকে।
নিম্নে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো—
গঠন প্রণালী (Mode of fromation): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় মূলত সরকারি নিয়ম-কানুন পালন করে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে বা দেশের আইনসভার বিশেষ আইনবলে অথবা বেসরকারি ব্যবসায় জাতীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠিত হতে পারে ।
মালিকানা (Ownership): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিক হলো সরকার বা জনগণ। এর সকল সম্পদ রাষ্ট্রের এবং এর কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়। অবশ্য এরূপ ব্যবসায় সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ।
মূলধন (Capital): সরকার এরূপ ব্যবসায়ের মালিক হওয়ার কারণে তাকেই এর প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করতে হয় । এজন্য সরকার নিজস্ব কোষাগার থেকে অথবা প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করে এর মূলধন সংগ্রহ করে ।
উদ্দেশ্য (Objectives): রাষ্ট্রীয় সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন নয়। তারপরও বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে এ ব্যবসায় মুনাফা অর্জন করে থাকে। এ মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা হয় অথবা জনস্বার্থে ব্যয় করা হয়।
আইনগত মর্যাদা (Legal status): রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসায় কৃত্রিম ও স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী। বিশেষ আইন দ্বারা গঠিত বলে এর একটি পৃথক আইনগত মর্যাদা রয়েছে।
জনকল্যান সাধন (Public Welfare): মুনাফা বৃদ্ধি কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। জনসেবা ও জনকল্যাণই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় গঠিত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভোগ করে থাকে ।
স্বায়ত্তশাসন (Autonomy): রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সংগঠন কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তার অধিকারী । ফলে এ ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী । বিশেষ আইন বা অধ্যাদেশ বলে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের অবসান ঘটানো যায় ।
গণ-কৈফিয়ত (Public accountability): এ ব্যবসায়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য জাতীয় সংসদে সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হয়।